Home জীবনযাপন ই-সিগারেট নিষিদ্ধ করার দাবি

ই-সিগারেট নিষিদ্ধ করার দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক
দেশের শহরাঞ্চলে ব্যবহার করা ই-সিগারেট, সাধারণ সিগারেটের মতোই ক্ষতিকর। শুল্ক দিগুণ করে এর ব্যবহার বন্ধ করা যাবে না। এ জন্য ই-সিগারেট নিষিদ্ধ করতে। সোমবার বেসরকারি গবেষণা সংস্থা ‘উন্নয়ন সমন্বয়’ এর আয়োজনে ‘ই-সিগারেটের ভয়াবহতা ও আগামী প্রজšে§র স্বাস্থ্যঝুঁকি’ শীর্ষক ওয়েবিনারে এমন মত দিয়েছেন আলোচকরা।
অনুষ্ঠানে সম্মানীয় অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল­াহ বলেন, ‘ই-সিগারেটও একটি তামাক। সর্বোপরি তামাকের ভালো কোনো বিষয় আছে বলে মনে হয় না। মানুষের শরীরের পা থেকে মাথা পর্যন্ত এমন কোনো অঙ্গ নেই, যাকে তামাক আক্রান্ত না করে। এখন সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও নন-কমিউনিকেবল ডিজিজ বাড়ছে। এর মানে কোনো রোগ-জীবাণুর মাধ্যমে হচ্ছে না। যেমনÑডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ক্যান্সার, হার্ট-কিডনির রোগ, লিভার-স্টক এগুলো। এগুলো দিন দিন ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। আমাদের দেশে ৬৫ থেকে ৭৫ শতাংশ মৃত্যু হচ্ছে এ রকম অসংক্রামক রোগ থেকে। এর মধ্যে ক্যান্সার, হার্ট অ্যাটাক ও ব্রেন স্ট্রোকে রোগীর মৃত্যুর সাধারণ কিছু কারণের মধ্যে তামাক সম্পৃক্ত আছে। ধূমপান বা ই-সিগারেট যাই বলেন এর মাধ্যমে হচ্ছে। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে তামাক ব্যবহারের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। বাংলাদেশে এক বছরে গড়ে এক লাখ ৬১ হাজার মানুষ মারা যায় তামাকের কারণে। তামাক থেকে যে রাজস্ব সরকার পায়, তার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি খরচ করতে হয়। যদিও কম্পানিগুলো মুখরোচক কথা বলছে, যে তারা অনেক টাকা সরকারকে দেয়।’
তিনি বলেন, যারা ধূমপান করে তারা ট্যাক্স বাড়িয়ে দিলেও গ্রহণ করবে। ট্যাক্স বাড়িয়ে ধূমপান নিরোধ করা সম্ভব নয়। বিদ্যমান তামাক ব্যবহারকারীদের একটি বড় অংশই তরুণ। আর নতুন ও আকর্ষণীয় পণ্য হিসেবে ই-সিগারেটের প্রতিও এদের আকৃষ্ট হওয়ার আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি। একই সঙ্গে এটি গ্রামেও চলে যেতে পারে। ই-সিগারেট যেন গ্রামে ছড়িয়ে না যায়, এ জন্য শক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ও উন্নয়ন সমন্বয়ের চেয়ারম্যান ড. আতিউর রহমান বলেন, ‘চলতি বাজাটে ই-সিগারেটের ওপর ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করার অভিপ্রায় রয়েছে। তার মানে দাম যদি দিগুণ করা যায় তাহলে এটা কি হালাল হয়ে গেল? বাজেট একটি অর্থ আইন। সেই আইনের বলে এক টাকার পণ্য দুই টাকায় ব্যবহার করা যাবে, সেটা যতই খারাপ হোক না কেন? এই যে একটা দুরভিসন্ধিমূলক আয়োজন, এটার ওপর কথা বলা প্রয়োজন। শুধু রাজস্ব বাড়ালেই এগুলো নিয়ন্ত্রণে আসবে না। আমরা রাজস্ব আদায় করব, কিন্তু নেতিবাচক প্রভাবে আমাদের স্বাস্থ্য খাতে বিরাট অঙ্কের ব্যয় করতে হয় শুধু তামাকজাত পণ্য ব্যবহার করার কারণে। একটি হিসাবে দেখা যায়, এতে আট হাজার কোটি টাকার মতো বার্ষিক ক্ষতি হয়ে যায়। তামাক সমাজের ক্ষতি, পরিবারের ক্ষতি।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে ই-সিগারেট এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে বাজারজাত করা হচ্ছে না। তবে ক্রমেই যুবসমাজ যেভাবে এর দিকে ঝুঁকছে তা বড় হুমকি হয়ে উঠছে। তরুণদের সচেতন করতে হবে। তারাই আমাদের সম্পদ। একটি জরিপে এসেছে, ৭২ শতাংশ তরুণ বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী। তাই যদি হয়, তাদের সব সময় আশাবাদী রাখতে হলে ধূমপানের ক্ষতি থেকে তাদের রক্ষা করা দরকার।’
একই আলোচনায় অংশ নিয়ে অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী বলেন, ‘আধুনিক সময়ে অনেক কিছু আসতে থাকবে, কারণ আমরা ডিজিটাল সময়ে বসবাস করছি। অনেক কিছুর কালো হাতের থাবা আমরা দেখতে পাব। কিন্তু সেগুলোর বিরুদ্ধে জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে, যা শুধু আইন বা অন্য কিছু দিয়ে সমাধান করা যাবে বলে মনে হয় না। আমার সন্তানকে যদি বোঝাতে পারি, তাহলে সুফল পাওয়া যাবে। ওটাই শেকর, সেখান থেকেই শেখানো উচিত। ধূমপানের বিরুদ্ধে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য স্কুল-কলেজের শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের বলতে পারেন। এ রকম অনেক ইস্যু আছে যেগুলো ছোটবেলা থেকেই আলোচনা করা উচিত।’
ন্যাশনাল হাট ফাউন্ডেশনের এপিডেমিওলজি ও রিসার্চ বিভাগের প্রধান ড. সোহেল রেজা চৌধুরী বলেন, ‘ই-সিগারেট ব্যবহারের ক্ষতি সাধারণ সিগারেটের ক্ষতির চেয়ে কম, এমন একটি বিভ্রান্তিকর প্রচারণার মাধ্যমে তামাক কম্পানিগুলো বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কিশোর-তরুণদের হাতে ই-সিগারেট তুলে দিয়ে অপূরণীয় ক্ষতি করছে। বাংলাদেশেও যেন এ ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয় তা নিশ্চিত করতে এখনই বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনটি সংশোধনের মাধ্যমে ই-সিগারেট নিষিদ্ধ করতে হবে।’
ওয়েবিনারে আরো অংশ নিয়েছিলেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবিরসহ আরো অনেকে।