কয়েক মাস আগে ১ টাকা পারিশ্রমিক নিয়ে আলোচনায় এসেছিলেন ঢাকাই চলচ্চিত্রের ব্যস্ত নায়ক আরিফিন শুভ। বাংলাদেশ-ভারত যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত বলিউডের শ্যাম বেনেগাল পরিচালিত সেই সিনেমার নাম ‘বঙ্গবন্ধু’। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বায়োপিকে কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করছেন আরিফিন শুভ। গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেও পারিশ্রমিক নিয়েছেন মাত্র ১ টাকা। কারণ হিসেবে জানিয়েছেন, বঙ্গবন্ধুর জীবনের বড় শিক্ষাই হলো আত্মত্যাগ। এ মানুষটার চরিত্র ধারণ করতে হলে তাকেও আত্মত্যাগী হতে হবে। সিনেমার জন্য ১ টাকা পারিশ্রমিক নেয়া সেই আত্মত্যাগেরই অংশ।
এর কিছুদিন পরেই অনুদানের চলচ্চিত্র ‘গলুই’ থেকে ৪০ লাখ টাকা পারিশ্রমিক নিয়ে আলোচনায় এসেছিলেন ঢাকাই চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় নায়ক শাকিব খান। প্রথম সারির দুই নায়ক যখন সবচেয়ে বেশি এবং সবচেয়ে কম পারিশ্রমিক নিয়ে আলোচনায় ঠিক তখন সবাইকে চমকে দিলেন ঢাকাই চলচ্চিত্রের একসময়কার ব্যস্ত নায়িকা নিপুণ আক্তার। তিনি হাঁটলেন আরিফিন শুভর পথে। ‘মনোলোক’ নামের একটি মুক্তিযুদ্ধভিক্তিক মনস্তাত্ত্বিক সিনেমা থেকে পারিশ্রমিক নিয়েছেন ১ টাকা। গতকাল মনোলোকের মহরত অনুষ্ঠানে এ কথা জানান তিনি। মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণী সিনেমা ‘মনোলোক’ রচনা ও পরিচালনায় থাকছেন শহীদ রায়হান। প্রযোজনায় হাফিজ আলম বক্স। সিনেমাটিতে অভিনয় করছেন চিত্র নায়িকা নিপুণ, ফজলুর রহমান বাবু, দিপা খন্দকার, সমু চৌধুরী, এমএ বারী, এ কে আজাদ সেতু, জয়িতা মহালনবিশ, নেয়াজ তারেক, মাসুদ মহিউদ্দিন, আশরাফুল আশীষ, আরিয়ান প্রমুখ।
গতকাল গুলশানে অনুষ্ঠিত হয় সিনেমার শুভ মহরত। এ সময় বলা হয়, মনোলোক একটি মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণের সিনেমা।
১ টাকায় চুক্তিবদ্ধ হওয়া প্রসঙ্গে নির্মাতা শহীদ রায়হান বলেন, ‘নিপুণ একজন পেশাদার অভিনেত্রী। আমি অবাক হলাম মানুষটির এই রূপ থেকে। শুধু ছবিটির পাণ্ডুলিপি আর আমাদের পরিকল্পনার কথা শুনেই তিনি এতে কাজ করার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করলেন। তিনি স্বেচ্ছায় মাত্র ১ টাকার বিনিময়ে আমাদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হলেন। একজন পরিচালক হিসেবে এটা যে কী পরিমাণের সম্মান ও উৎসাহের বিষয়, সেটি বলে বোঝাতে পারব না। নিপুণের এ ঘটনা উদাহরণ হয়ে থাকবে।’
নির্মাতা জানান, ২১ নভেম্বর থেকে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত একটানা ছবিটির শুটিং হবে ঢাকার বিভিন্ন লোকেশনে। এটি মুক্তির লক্ষ্য আগামী স্বাধীনতা দিবস তথা ২৬ মার্চে।
ছবিটিতে নিপুণ অভিনয় করবেন একজন মায়ের চরিত্রে। নির্মাতার ভাষায়, ‘মা বলতে এখানে আমরা বোঝাতে চাইব দেশমাতৃকাকে। মা মানেই দেশ, সেই বিষয়টি ফুটিয়ে তুলব নিপুণের চরিত্রের মাধ্যমে।’
সিনেমা থেকে ১ টাকা পারিশ্রমিক নেয়া প্রসঙ্গে নিপুণ বলেন, ‘সিনেমাটির গল্প আমার অসম্ভব ভালো লেগেছে। মুক্তিযুদ্ধের সময়, ঘটনা ও প্রেক্ষাপটকে মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ করা হয়েছে। গল্প পড়েই সিদ্ধান্ত নিই নামমাত্র অর্থাৎ ১ টাকা পারিশ্রমিকে সিনেমাটি করব। এত সুন্দর একটা গল্পের সঙ্গে থাকতে পেরে আমি গর্বিত।’ পরিচালক, প্রযোজকদের ধন্যবাদও জানান তিনি।
মহরত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত আসাদুজ্জামান নূর এমপি। মনোলোক সিনেমাটিকে বলা হচ্ছে, স্বাধীন বাংলাদেশের অনিবার্য অভ্যুদয় এবং স্বাধীনতা-উত্তর রাজনৈতিক প্রবাহ ও স্বাধীনতার পক্ষ-বিপক্ষ, বিরাজমান মতবিরোধ এবং রাজনৈতিক জীবনে তার প্রতিফলন ঘটেছিল যেসব গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক নেতা, তাদের অচেতন মনের অব্যক্ত চেতনা এবং দর্শন নিয়ে বাস্তবের মননভূমিতে দাঁড় করানোর এ দীর্ঘ প্রস্তুতি।
অনুষ্ঠানে আরো বলা হয়, বলতে গেলে এটা ছিল দেশবাসীর হূদয়ে স্বাধীনতার দীর্ঘ লালিত স্বপ্ন, বাংলাদেশ ও এর বিরোধিতার দর্পণে নতুন করে অবলোকনের এক বিরল ও বিমূর্ত দার্শনিক যুদ্ধের বুদ্ধিবৃত্তিক রণক্ষেত্র।
সিনেমাটি নিয়ে নির্মাতা শহীদ রায়হান বলেন, ‘মনোলোক চলচ্চিত্রের রূপালী পর্দার বাইরে বাস্তবের নিকষ সাদা-কালো জগতে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও গণমানুষের মননজগতে এক দুর্ভেদ্য মানসিক সুরক্ষাবলয় নির্মাণে এবং জাতীয় জীবনে শত্রু-মিত্র নির্ণয়ে সুদূরপ্রসারী ভূমিকা রাখবে।’