Home আরও করোনা রোগী বাড়ছে, আইসিইউ সংকট

করোনা রোগী বাড়ছে, আইসিইউ সংকট

করোনা সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা ৩১ জেলার মধ্যে ১৫টিতেই নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) নেই। ১০ মাস আগে প্রধানমন্ত্রী প্রতিটি জেলা সদর হাসপাতালে আইসিইউ ইউনিট স্থাপনের নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু এত দিনেও জেলা পর্যায়ে আইসিইউ ইউনিট তৈরি হয় নি।

গত এক সপ্তাহ ধরে ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ শনাক্ত হচ্ছে, মৃত্যুও এই বিভাগে বেশি। সারা দেশে এক সপ্তাহে মারা যাওয়া ২৪৯ জনের মধ্যে ১৭৮ জনই ঢাকা বিভাগের। অথচ সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এ বিভাগে উচ্চ সংক্রমণ থাকা ১১ জেলার ছয়টিতেই আইসিইউ নেই। জেলাগুলো হলো: টাঙ্গাইল, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, নরসিংদী, রাজবাড়ী ও মুন্সিগঞ্জ।

উচ্চ সংক্রমণের ঝুঁকিতে থাকা খুলনা বিভাগের নড়াইল ও যশোর, রাজশাহী বিভাগের নওগাঁ ও নাটোর এবং রংপুর বিভাগের নীলফামারী জেলায় আইসিইউ সুবিধা নেই। এর মধ্যে গত এক সপ্তাহে রাজশাহীতে ১৫ জন, খুলনায় ১১ জন ও রংপুর বিভাগে ৩ জন মারা গেছেন।

নরসিংদী জেলায় এখন চিকিৎসাধীন করোনা রোগী ৩৭৬ জন। এ রোগীদের জন্য বিভিন্ন হাসপাতালে নির্ধারিত সাধারণ শয্যা আছে ১১০টি। গত মঙ্গলবার রোগী ভর্তি ছিলেন ২৭ জন। করোনা রোগীদের জন্য জেলার কোনো হাসপাতালে আইসিইউ শয্যা নেই। নরসিংদী জেলা হাসপাতালে হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলা আছে ২টি।

দুটি জেলার স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, অধিকাংশ রোগী বাসায় থেকে চিকিৎসা নেন। শ্বাসকষ্টের মতো জটিলতা দেখা দেওয়ার পরে হাসপাতালে আনা হয়। আইসিইউ ও ভেন্টিলেটর সুবিধা না থাকায় দ্রুত অন্য জেলায় স্থানান্তর করা হচ্ছে।

ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা জাফর আলী দেওয়ান প্রথম আলোকে বলেন, ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে আইসিইউ সুবিধা নেই। শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেলে সংকটাপন্ন রোগীদের বরিশাল শের-ই–বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে।

অনেক ক্ষেত্রে করোনার জটিল রোগীদের আইসিইউর চেয়েও উচ্চমাত্রায় অক্সিজেন সরবরাহের প্রয়োজন বেশি হয়। এ জন্য জেলা হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্তসংখ্যক অক্সিজেন সরবরাহের যন্ত্র হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলা থাকা প্রয়োজন। সংক্রমণ ঝুঁকির ৩১ জেলার মধ্যে অন্তত ৪টি জেলায় কোনো হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলা নেই। অধিকাংশ জেলায় ১ থেকে ৫টি করে নাজাল ক্যানুলা রয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশে হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলা রয়েছে ৭১৫টি।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক কোভিড-১৯ পরিস্থিতির ক্রমাগত অবনতি হওয়ায় গতকাল হাসপাতালগুলোর সুযোগ-সুবিধা ও শয্যা বৃদ্ধির বিষয়ে বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে সভা করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, করোনার সংক্রমণ বাড়ায় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আরও দুই হাজার হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলা পাঠানো হয়েছে।

সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে করোনায় আক্রান্ত রোগী রাখার জায়গা নেই উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বেড না হয় বাড়ালাম, কিন্তু রোগী আরও বাড়লে তাতেও লাভ হবে না। প্রতিদিন ৫ হাজার লোক আক্রান্ত হলে এবং সবাই হাসপাতালে এলে সারা দেশকে হাসপাতালে রূপান্তর করলেও রোগীর জায়গা দিতে পারব না। তিনি ঢাকায় জোরাজুরি না করে কাছের জেলাগুলোতে গিয়ে সেবা নেওয়ার পরামর্শ দেন।

ঢাকায় আইসিইউর জন্য হাহাকার

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ঢাকায় করোনার জন্য নির্ধারিত সরকারি ব্যবস্থাপনার ১০টি হাসপাতালের ১০৮টি আইসিইউ শয্যার মধ্যে গতকাল ১০৩টিতে রোগী ভর্তি ছিলেন। বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী সরকারি হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, সরকারি কর্মচারী হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে গতকাল কোনো আইসিইউ ফাঁকা ছিল না। মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১টি এবং রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতাল এবং মহাখালীর শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে ২টি আইসিইউ ফাঁকা ছিল।

মিরপুরের বাসিন্দা রুবেল হাসানের ৮০ বছর বয়সী শ্বশুর করোনায় আক্রান্ত। মিরপুরের একটি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। ওই হাসপাতালে আইসিইউ ছিল না। গতকাল ঢাকার বিভিন্ন সরকারি–বেসরকারি হাসপাতালে যোগাযোগ করেও একটি আইসিইউ শয্যা জোগাড় করতে পারেননি রুবেল। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘সকাল থেকে পাগলের মতো একটা আইসিইউ খুঁজেছি। কিন্তু কোনো হাসপাতালের আইসিইউ ফাঁকা নেই। দুপুরের পরে মালিবাগের একটি ক্লিনিকের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়েছে।’

ঢাকার দুটি সরকারি হাসপাতালের করোনা ইউনিটের চিকিৎসক প্রথম আলোকে বলেন, আইসিইউ ফাঁকা নেই, কিন্তু আইসিইউর চাহিদা অনেক। অধিকাংশ সময়ই ১৫ থেকে ২০ জন রোগী আইইসিইউর অপেক্ষায় থাকছেন। রোগীর স্বজনেরা রীতিমতো কান্নাকাটি করছেন একটি আইসিইউর জন্য। চিকিৎসকেরা নিরুপায় হয়ে গেছেন। অন্য হাসপাতালে যে পাঠাবে, সেখানেও একই অবস্থা।

ঢাকায় আইসিইউর পাশাপাশি সাধারণ শয্যাতেও রোগীর চাপ বেড়েছে। ঢাকায় সরকারি ব্যবস্থাপনায় করোনা রোগীদের জন্য সাধারণ শয্যা রয়েছে ২ হাজার ৫১১টি। এগুলোর মধ্যে ২ হাজার ২৪৬টি শয্যায় রোগী ভর্তি ছিলেন। ফাঁকা ছিল ২৬৫টি শয্যা।

#bangladeshbusiness/sk..