চলমান করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) মোবাইল অ্যাপ ব্যবহারকারী বিনিয়োগকারীর সংখ্যা বেড়েছে। তবে বিনিয়োগকারীর সংখ্যা বাড়লেও কমেছে লেনদেনের হার।
ডিএসইর মোবাইল অ্যাপের লেনদেন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, লকডাউন শুরুর আগে ডিএসইতে যে লেনদেন হয় তার প্রায় ১৫ শতাংশ ছিল মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে। কিন্তু লকডাউনের মধ্যে তা কমে ১০ শতাংশের কাছাকাছি চলে এসেছে। অথচ লকডাউনের মধ্যে মোবাইল অ্যাপে নতুন বিনিয়োগকারী বেড়েছে প্রায় দুই হাজার।
মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে লেনদেন হার কমে যাওয়ার কারণ লকডাউনের মধ্যে লেনদেনের পরিমাণ বেড়েছে। তাছাড়া মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করেন ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা। বড় বিনিয়োগকারীরা মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করেন না
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডিএসইর মোবাইল অ্যাপে নানা সুবিধা রয়েছে। কিন্তু সঠিক প্রচার-প্রচারণার অভাবে এই অ্যাপ ব্যবহাকারীর সংখ্যা খুবই কম। এছাড়া ডিএসইতে দক্ষ লোকবলের অভাবে মোবাইল অ্যাপে প্রায় বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয়, যা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। আবার যারা এই অ্যাপ ব্যবহার করছেন, তাদের সিংহভাগ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী। ফলে লেনদেনের খুব কম অংশই অ্যাপের মাধ্যমে হচ্ছে।
তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, লকডাউনের আগের দিন গত ৪ এপ্রিল ডিএসইর মোবাইল অ্যাপে নিবন্ধিত বিনিয়োগকারীর সংখ্যা ছিল ৬২ হাজার ৪৭৬ জন। ২৯ এপ্রিল এসে সেই সংখ্যা দাঁড়ায় ৬৪ হাজার ৬৫ জনে। এই হিসাবে লকডাউনের মধ্যে মোবাইল অ্যাপে নতুন করে নিবন্ধিত হয়েছেন এক হাজার ৫৮৯ জন।
এদিকে লকডাউনের আগে এপ্রিলের শুরুতে বা ১ এপ্রিল ডিএসইর মোট লেনদেনের ১৪ দশমিক ৬৫ শতাংশ ছিল মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে। লকডাউনের আগের কার্যদিবস ৪ এপ্রিল ডিএসইর মোট লেনদেনের ১৪ দশমিক ৯২ শতাংশ ছিল মোবাইল অ্যাপ থেকে।
অন্যদিকে ২৯ এপ্রিল ডিএসইর মোট লেনদেনের ১১ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ মোবাইল অ্যাপ থেকে ছিল। তার আগের কার্যদিবস ২৮ এপ্রিল মোবাইল অ্যাপ থেকে লেনদেনের পরিমাণ ছিল ডিএসইর মোট লেনদেনের ১০ দশমিক ৬৩ শতাংশ। এপ্রিলে মোবাইল অ্যাপে লেনদেন হার সবচেয়ে কম ছিল ২০ এপ্রিল। ওই দিন ডিএসইর মোট লেনদেনের ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ ছিল মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে। এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, লকডাউনের মধ্যে ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়লেও মোট লেনদেনে মোবাইল অ্যাপের অংশ কমে গেছে।
লকডাউনের আগের দিন ৪ এপ্রিল নিবন্ধিত ৬২ হাজার ৪৭৬ জন বিনিয়োগকারীর মধ্যে অ্যাপে প্রবেশ করেন ১৯ হাজার ৩৪১ জন। এসব বিনিয়োগকারী মোট ৪৫ হাজার ৭৯৫টি ক্রয়-বিক্রয়ের আদেশ দেন। এর মধ্যে ৩৭ হাজার ৮৩৭টি ক্রয়-বিক্রয়ের আদেশ নিষ্পন্ন হয়।
লকডাউন শুরুর পর অ্যাপে প্রবেশ করা বিনিয়োগকারীর সংখ্যা কমতে কমতে ১৩ এপ্রিল ১৭ হাজার ৬৫৪ জনে নেমে আসে। সেই সঙ্গে ক্রয়-বিক্রয়ের আদেশ কমে দাঁড়ায় ৩৭ হাজার ৭৪৪টিতে, যার মধ্যে লেনদেন নিষ্পন্ন হয় ২৫ হাজার ১২৩টি।
অবশ্য শেষ দুই কার্যদিবসে (২৮ ও ২৯ এপ্রিল) অ্যাপে প্রবেশকারী বিনিয়োগকারীর সংখ্যা ২০ হাজার ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে ২৮ এপ্রিল ২০ হাজার ২২০ জন বিনিয়োগকারী অ্যাপে প্রবেশ করে ৪৭ হাজার ৭১৩টি ক্রয়-বিক্রয়ের আদেশ দেন। লেনদেন নিষ্পন্ন হয়েছে ৩৪ হাজার ২৭০টির। ২৯ এপ্রিল ২০ হাজার ৩৬২ জন বিনিয়োগকারী অ্যাপে প্রবেশ করে ৫২ হাজার ৩৩৩টি ক্রয়-বিক্রয়ের আদেশ দেন, যার মধ্যে নিষ্পন্ন হয়েছে ৩৯ হাজার ৫৯১টি।
এ বিষয়ে শেয়ারবাজার বিশ্লেষক অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, ‘মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে লেনদেন হার কমে যাওয়ার কারণ লকডাউনের মধ্যে লেনদেনের পরিমাণ বেড়েছে। তাছাড়া মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করেন ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা। বড় বিনিয়োগকারীরা মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করেন না।’
বড় বিনিয়োগকারীরা মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার না করার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘বড় বিনিয়োগকারীরা ব্রোকারেজ হাউসের লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে চান। তারা অ্যাপের বদলে যোগাযোগের মাধ্যমে লেনদেন করতে বেশি আগ্রহী।’
এদিকে পাঁচ বছরেও মোবাইল অ্যাপে বিনিয়োগকারীদের তেমন সাড়া পাওয়া না গেলেও চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের মধ্যে এই মাধ্যমে তিন লাখ বিনিয়োগকারীকে যুক্ত করার পরিকল্পনা নিয়েছে ডিএসই।
এ বিষয়ে ডিএসই পরিচালক মো. রকিবুর রহমান বলেন, ‘আমরা চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের মধ্যে মোবাইল অ্যাপের আওতায় তিন লাখ বিনিয়োগকারী নিয়ে আসবো। এ জন্য সব ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। মোবাইল অ্যাপের যে ধরনের প্রযুক্তিগত সংস্কারের প্রয়োজন তা করা হচ্ছে।’
বিজনেস/এমর