রড ও সিমেন্টের বাজার লাগামহীন। বছরের ব্যবধানে এমএস রডের দাম টনপ্রতি বেড়েছে প্রায় ২০ শতাংশ। সিমেন্টের দামেও প্রায় একই ধারা। এর প্রভাব পড়ছে দেশের নির্মাণশিল্পে। ব্যক্তি-উদ্যোগে পাকা স্থাপনা নির্মাণেও ব্যয় বেড়ে চলেছে লাফিয়ে লাফিয়ে।
বাজার পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এক বছরে রডের দাম বেড়েছে ৬৫ শতাংশ। সাম্প্রতিক সময়ে এতটা বেশি পরিমাণে রডের দাম আর কখনোই বাড়েনি। বাজারভেদে বর্তমানে এক টন রড ৯৩ থেকে ৯৫ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কিছুদিন আগে তা ছিল ৮৬ থেকে ৮৭ হাজার টাকা।
মিল মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রডের কাঁচামালের আমদানি ব্যয় অনেকটা বেড়ে গেছে। ডলার সংকটের কারণে নতুন ঋণপত্র বা এলসি খুলতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা।
রডের প্রধান কাঁচামাল পুরোনো লোহালক্কড় বা স্ক্র্যাপ আমদানি করে বিলেট তৈরি করে তা রি-রোলিং মিলে গলিয়ে রড তৈরি করা হয়। ৮০ শতাংশ স্ক্র্যাপ আমদানি করা হয়। বাকি ৩০ শতাংশ সংগ্রহ করা হয় অভ্যন্তরীণভাবে। ভাঙ্গারি ব্যবসায়ী ও পুরনো জাহাজ কেটে তা থেকে স্ক্র্যাপ সংগ্রহ করা হয়। আগে প্রতি ডলার ৮৫ টাকা ধরে কাঁচামাল স্ক্র্যাপের আমদানি ব্যয় পরিশোধ করা হতো। ডলার সংকটের কারণে সেটি ১১০ টাকায় পরিশোধ করতে হচ্ছে।
করোনা-পরবর্তী সময়ে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি টন স্ক্র্যাপের দাম ৪০০ থেকে ৪৫০ ডলারে গিয়ে ঠেকে। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৫০ ডলার।
রড বিক্রি আগের তুলনায় কমে গেছে জানিয়ে শাহরিয়ার স্টিল মিলস লিমিটেডের এমডি শেখ মাসাদুল আলম বলেন, ‘ঠিকাদাররা আগের দামে কাজ করছেন না। ডলারের দাম নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে এবং পণ্যের দাম পুনর্মূল্যায়ন না হলে ব্যবসায় লোকসান হবে। এতদিনের লোকসান পুষিয়ে নেয়াও কঠিন। সরকারি সব আগের প্রকল্পগুলোর কাজ চলছে। নতুন কোনো প্রকল্প নেয়া হচ্ছে না। ফলে রডের চাহিদা কমে গেছে।’
অন্যদিকে, সিমেন্টের দাম প্রতি বস্তায় বেড়েছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। খুচরা পর্যায়ে ৫০ কেজির প্রতি বস্তা সিমেন্টের দাম কোম্পানিভেদে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৪০ থেকে ৫৫০ টাকা। কিছুদিন আগেও তা ছিল ৪৯০ থেকে ৫০০ টাকা। তাছাড়া সিমেন্ট তৈরিতে পাঁচ ধরনের কাঁচামাল ব্যবহার করা। এর পুরোটাই আমদানিনির্ভর।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরে ৩ কোটি ৩৫ লাখ টন সিমেন্টের কাঁচামাল আমদানি করা হয়েছ। এতে খরচ পড়েছে ১৫৪ কোটি ডলার। দেশে সিমেন্ট উৎপাদনকারী ৪০টি প্রতিষ্ঠান এই কাঁচামাল আমদানি করেছে। কোম্পানিভেদে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের কাঁচামাল আমদানি বাড়লেও বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানেরই আমদানি কমেছে। কাঁচামাল আমদানি কমে এলেও খরচ বেড়েছে প্রায় ১৭ শতাংশ।
বাংলাদেশ স্টিল মিলস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও শাহরিয়ার স্টিল মিলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ মাসাদুল আলম বলেন, ‘সারা বিশ্বে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার কারণে ট্রান্সপোর্ট কস্ট বেড়েছে। বিদ্যুতের ঘাটতির কারণে উৎপাদন কম হচ্ছে। এর মধ্যে ডলার বাজারে অস্থিরতা দেখা দেয়ায় ব্যাংকে এলসিও খোলা যায়নি। এসব কারণে কাঁচামালের সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। যার কারণে এসব পণ্যের দাম বাড়ছে।’
বিজনেস/এম.আর